শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি উদ্ধারে যাচাই করছে ডিআইএ

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক:

ঢাকার গেন্ডারিয়ায় শ্যামপুরে ফজলুল হক মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৭০ সালে। শুরুতে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২ দশমিক ৩২ একর জমি থাকলেও বর্তমানে ১ দশমিক ০৫ একর জমি রয়েছে। পরিদর্শনে এক একরের বেশি জমি বেহাত হওয়ার প্রমাণ পায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। এভাবে অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত সারাদেশের চারশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে তিনশ একর জমি ও ভৌত অবকাঠামো বেদখল হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। এসব সম্পত্তি উদ্ধারে কাজ চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

ডিআইএর পরিদর্শন ও অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, ঢাকার রমনা, শান্তিগনগর এলাকায় নয়াটোলা এ ইউ এন মডেল কামিল মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৭০ সালে। অনুমোদনের সময় ৯৩ শতাংশ জমি দেখানো হলেও বর্তমানে জমি রয়েছে ৭১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ১৯৮৩ সালে পরিদর্শনের সময় ৮০ শতাংশ, ১৯৯৫ সালে এক দশমিক ০৫ একর আর সবশেষ পরিদর্শনে ৭১ দশমিক ৮৯ শতাংশ অর্থাৎ, ১২ শতাংশ জমির হদিস মেলেনি। প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ১৭৩ জন।

যাত্রাবাড়ী মান্নান হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। অনুমোদনের সময় ৫৯ দশমিক ২৮ শতাংশ জমি খারিজ করা হয় প্রতিষ্ঠানের নামে। আরও ২৬ দশমিক ৪০ শতাংশ জমি প্রতিষ্ঠানের নামে কিনতে তহবিল থেকে ব্যয় করা হয় ১৫ লাখ টাকা।

ডিআইএ’র সবশেষ পরিদর্শনে সেখানে ৮৪ দশমিক ৯০ শতাংশের বদলে ৩০ শতাংশ জমির অস্তিত্ব মেলে। বাকি জমির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। শুধু ঢাকার এ তিন প্রতিষ্ঠান নয়, দেশের প্রায় চারশ এমপিওভুক্ত ও ননএপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভৌত কাঠামোর আংশিক বা অধিকাংশ জমি বেহাত হয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের সময় জমি বেহাতের এমন প্রমাণ মিলেছে।

জমি বেহাত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মান্নান হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং কমিটির সভাপতি বাহারুল ইসলাম বলেন, এটি আমার কমিটির সময়ে হয়নি। অনেক আগের কমিটির সিদ্ধান্তে কিছু জমি বিক্রি করা হয়। সে অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কাজ করা হয়েছে। বাকি অর্থ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফান্ডে।

ডিআইএ সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিদর্শনের সঙ্গে জমির পরিমাণ যাচাই-বাছাই কাজ শুরু করা হয়। তাতে মার্চ মাসে দেশের বিভিন্ন জেলার স্কুল-কলেজের ৪৫ দশমিক ১৫৮৫ একর, কারিগরি ও মাদরাসার ১৫ দশমিক ৭৮৭ একর জমি বেহাতের প্রমাণ পাওয়া যায়। পরের মাসে করোনার কারণে বন্ধ থাকায় পরিদর্শন করা সম্ভব হয়নি। একই বছরের মে মাসে ১০ দশমিক ৬৭, কারিগরি মাদরাসার ৪ দশমিক ৭৭, জুনে ২৭ দশমিক ৭৩৫১৫, কারিগরি-মাদরাসার ৯ দশমিক ৮৬৯৫, জুলাইয়ে স্কুল-কলেজের শূন্য দশমিক ১৪, কারিগরি-মাদরাসার শূন্য, আগস্টে ১১ দশমিক ৫৮২৫, কারিগরি- মাদরাসার ৩ দশমিক ৩৮৫, সেপ্টেম্বরে ২ দশমিক ৯৮৭৫, কারিগরি- মাদরাসায় শূন্য দশমিক ৮৪, অক্টোবরে স্কুল-কলেজে ৫৫ দশমিক ৫৮৮, কারিগরি-মাদরাসায় ১০ দশমিক ২৫১৯, নভেম্বরে ৩ দশমিক ৭০, কারিগরি মাদরাসায় ৩ দশমিক ৭৬৮৩, ডিসেম্বরে ২৪ দশমিক ৯০৪৯ এবং কারিগরি-মাদরাসার ২১ দশমিক ১৪ একর জমি বেহাত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।

এভাবে ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সব মিলে সারাদেশের স্কুল-কলেজে ২৫৯ দশমিক ৯৩৩১৩ ও কারিগরি-মাদরাসার ৮৮ দশমিক ৭৮৯৩ একর জমি বেদখল হয়ে যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে বলে জানায় ডিআইএ।

ডিআইএ’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদনের সময় যে পরিমাণে জমির কাগজপত্র দেখানো হয়েছে পরে সেখানে পরিদর্শন করতে গেলে সে পরিমাণে জমি পাওয়া যায়নি। কোথাও কোথাও পাঠদান অনুমোদন, পাঠদান স্বীকৃতি ও পরে এমপিওভুক্তি হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমির একটি অংশ বিক্রি করে দিচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং কমিটি ও প্রতিষ্ঠান প্রধান মিলে ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন সে অর্থ।

অনেক স্থানে আবার বিত্তশালী ব্যক্তিরা স্কুল-কলেজের জন্য বিপুল পরিমাণে জমি দান করে অন্যত্র চলে গেলে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি সেসব জমি দখল করে নিচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে জমির পরিমাণ যাচাই-বাছাইয়ে ধরা পড়ছে অসঙ্গতি।

জানতে চাইলে ডিআইএ’র পরিচালক আজমতগীর বলেন, আমাদের তদন্ত কর্মকর্তারা পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি বেহাত হওয়ার প্রমাণ পাচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগ আগে পাওয়া যায়নি বলে গুরুত্ব দেওয়া হতো না। বর্তমানে কর্মকর্তারা পরিদর্শনের সময় এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখছেন।

তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত দেশের অনেক স্কুল-কলেজ, করিগরি ও মাদরাসার ৩৪৮ একরের বেশি জমি বেহাত হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে অনুমোদনের সময় কত ছিল আর বর্তমানে কতটা জমি রয়েছে তা নির্ণয় করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত যেসব সম্পত্তি বেহাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে সেসব উদ্ধারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।

আরইউ